হযরত- রাসুলুললাহ সাঃ এর চলাফেরা, আলাপ-আলোচনা, প্রত্যেকটি কাজ এমনকি বসে থাকাও ‘ইবাদত। চুপ করে করে আল্লাহর ধ্যান বা যিকর ইত্যাদি কোন কাজই তিনি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে করেননি। সাংসারিক যেসব কাজ মানুষ করে, যদি সততার সাথে আল্লাহপাকের সন্তোষলাভের উদ্দেশ্যে করে, তবে নিশ্চয়ই এসব কাজ ‘ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবেই। ‘ইবাদত হযরত রাসুলুল্লাহ সাঃ -এর আচরণের এক অংশ বিধায় তা এক অধ্যায় করে তাঁর ‘ইবাদতের কয়েকটি নমুনা বর্ণনা করা হয়েছে। তা পড়ে আমাদের বোধোদয় হওয়া উচিত যে, হযরত রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর অতিপ্রিয় নিষ্পাপ বান্দা ও আল্লাহর দরবারে শ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ফরয ও ওয়াজিব ‘ইবাদত আদায় করতেন।
তা ছাড়াও নফল নামায, তসবীহ, তিলাওয়াত ইত্যাদি ‘ইবাদতও করতেন। তিনি মুক্তির সনদপ্রাপ্ত হয়েও বন্দেগিতে বিন্দুমাত্র আলস্য প্রকাশ করেননি। আমরা তাঁর উম্মত ও অনুসারী বলে দাবি করে থাকি। আবার আমরা মা’সূম বা নির্দোষ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত নই, অথচ আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।
আল্লাহর দরবারে বান্দাদের ‘ইবাদতের ওযন ঠিক হয়। ‘ইবাদতের সময় যার আন্তরিকতা, আল্লাহর ধ্যান ও একাগ্রচিত্ততা যতদূর হবে, সেই পরিমাণে তার ওযন ঠিক হয়ে সাওয়াব নির্ধারিত হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন কোন বান্দা নামায পড়ে সেই নামাযের সাওয়াব ষোল আনার মধ্যে মাত্র এক আনা, দুই আনা, তিন আনা, চার আনা, আট আনা বা এর অধিক পেয়ে থাকে। ‘ইবাদতের সাওয়াব ও ওযন তার মনের ও নিয়তের অবস্থাভেদে নির্ধারিত হয়।
কোন বান্দা হয়ত কিছুই পেল না। কারণ তার নামায একটা দৃশ্যমাত্র ছিল। তার ভেতরে প্রাণ বা যথার্থ বলে কিছুই নেই। আল্লাহর প্রতি আন্তরিকতা ইত্যাদি কিছুই তাতে নেই। কাজেই চিন্তা করা দরকার যে, আমাদের মতো বান্দাদের ত্রুটিপূর্ণ নামায- ‘ইবাদত ইত্যাদির ওযন কিরূপ দাঁড়াবে? ফরয, ওয়াজিব ইত্যাদি ‘ইবাদতে ত্রুটি-ধরা পড়ে হাশরের দিন যখন ওযনে কম পড়বে, আল্লাহপাক নিজগুণে তার নফল ‘ইবাদত দ্বারা তা পূরণ করে তাকে রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
অতএব ফরয-ওয়াজিব ‘ইবাদত ছাড়াও আরও যথেষ্ট পরিমাণে রাসূলুল্লাহ-এর তরীকামতে নামায, নফল রোযা ও নফল সাদকা এবং তসবীহ ও তিলাওয়াত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার পছন্দ মতো সকল কাজ করবার আগ্রহ এবং শক্তি প্রদান করুন। (আমিন) শামায়েলে তিরমিজি অধ্যায় ৪০.