লেখকঃ- এস ই ইসলাম
চেয়ারম্যানঃ- জাতীয় ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি
বিশেষ প্রতিনিধিঃ- বাংলাদেশ আমেরিকান প্রেস সার্ভিস
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়ে।
একটি ঘাসের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু।
বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথের এই কথা যুগে যুগে যাথার্থই। বাংলাদেশের গ্রামের শীত ঋতু সত্যিই এর তুলনা হয় না।
শীত মানেই কুয়াশায় মোড়া শীতের সকাল। চোখ বন্ধ করলেই মনের পর্দায় ভেসে উঠে হাড় কনকনে শীতে জবুথুবু একটি গ্রামের ভোর। হীম শীতল শীতে কুয়াশা ঢাকা কিষান বাড়ির উঠানের একপ্রান্তে গনগনে জলন্ত উনুন। ছেলে বুড়ো উনুনের ধার ঘেষে বসে তাপ নেয়। মুখে হাসির রেখা নিয়ে কিষানী বউ টির সুনিপন হাতের ভাপা পিঠার আতপ চাল নারিকেল আর গুরের গন্ধে গরম ধোঁয়া উঠা পিঠা একেকবার একেক জনের হাতে। সে এক চিরায়াত গ্রাম বাংলার চিরচেনা শীতের সময়ের পরম মমতা ও ভালবাসার ছবি। শৈশবে আমার শীতের এক আলাদা অনুভূতি ছিল।
শীতকালে প্রকৃতিতে বড় পরিবর্তন আনে সরিষা ক্ষেত। সবুজ মাঠ যেন ঢেকে যায় হলুদ গালিচায়। শীত মৌসুমে বিল এলাকার হলুদ একস্বর্গের রুপ নেয়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ঝিলের মাঝে শাপলা তুলে, কনকনে শীতের মজা খেজুর রসে। প্রকৃতি যেন ,মানুষের মত কাঁপতে থাকে । তবে রুপসী শীতের নানা উপকরণ কুয়াশার চাদরে ঢেকে রাখে গৃহস্থের অঙ্গিনায়। হেমন্ত আর বসন্তের মাঝে শীত আসে শূণ্য মাঠের পথে, নিরবে কখনোও শীতের কুয়াশাচ্ছন সকাল। দিন শেষে ও সূর্যের দেখা মিলেনা। মাঝে মাঝে হালকা লাল আভায় উকিঁ দিয়ে যায় সূর্যি মামা। হাড় কাঁপানো শীতে গায়ে চাদর জরিয়ে দরজা খুলতেই একরাশ কুয়াশা ঢুকে পড়ে ঘরে, সকল কিছু হিম শীতল করে দেয়। কথার সাথে মুখ থেকে বের হওয়া ধোঁয়া যেন জানান দেয় শীতের প্রখরতা। কৃষক আশার আলো নিয়ে কুয়াশার অন্ধকারে কাস্তে, কোদাল, পান্তা, মরিচ, পিয়াজ নিয়ে মাঠে চলে যায় নিরবে। গ্রাম বাংলার হাওর, বাওড়, ছোট নদী, নালা, খাল, বিল, ডোবায় মাছ ধরার হিরিক পরে যায় এ সময়ে। শীতের সবজি সকল ঋতুর চেয়ে সু-স্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত।
সাংস্কৃতির এই শৈল্পিক ঐতিহ্যের চরম প্রানোচ্ছলতায় আসলেই ঋতুচক্রে বছর ঘুরেই আসে শীত। খুব ভোরে খেজুর রসের হাড়ি নামিয়ে আন্তে ব্যস্ত হন চাষী আবার বিকালে পরবর্তি দিনের জন্য হাড়ি পরিস্কার করে গাছে পেতে দেওয়া হয়। কখনও গভীর রাতে রস সংগ্রহ করে পায়েসের আসর বসানো হয়। দুরে খড়কুটা জ্বেলে আগুন জ্বালিয়ে নিবারণ করা হয় রাতের শীত। খাওয়া হয় পিঠা, পুলি, ভাঁপা, চিতই। জামাই আদরও হয় এ সময় শীতের রসের পিঠায়। বাড়ী ভর্তি আতœীয়দের খাওয়া দাওয়ার ধুমপড়ে যায় এটি ও একটি উল্লেখযোগ্য শীত কালীন ঐতিহ্য আমাদের বাংলায়।
শীতে এদেশের হাওর, বিল, ঝিল ও শহরের লেকে মেলা বসে অতিথী পাখির। এ সময় সূদূর সাইব্রেরিয়া সহ অন্যান্য দেশ থেকে পাখিরা আমাদের দেশে এসে ঘুরে বেড়ায় স্বাধীন ভাবে। এখন আর অতিথী পাখিদের বদ করা হয়না। শীতের সকালের রোদের আলোকচ্ছটায় নানা রঙ ছড়ায় তাতে হীরক দ্যুৎতি। এক সময় সেই রঙিন জলমোতি টুপ করে ঝরে পড়ে মাটির কোলে। পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেনো, সে সৌন্দর্য্যরে তুলনা হয়না বুঝি আর। তবে এই অপরূপ শীতের সৌন্দর্য্য অনুভবে ও উপভোগে ভুলে যাওয়া যায়না-সেইসব ছিন্নমূল মানুষদের কথা। একটুকরো শীতের কাপড় বা মাথা গোজার ঠাঁই নেই যাদের তাদের জীবনের শীত আনন্দের নয়। তাই আসুন, যার যে সাধ্যমত কাছের দরিদ্র মানুষটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই ও পৃথিবীকে করে তুলি সুন্দর ও মঙ্গলময়।